অনলাইনে আছেন

  • জন ব্লগার

  • ১৮ জন ভিজিটর

স্বামী-স্ত্রীর মধুর বাঁধন: আল্লাহ তাআ'লার অনন্য নিদর্শন...

লিখেছেন জিবরান শনিবার ১৫ জানুয়ারী ২০২২
 
বিয়েকে বলা হয়েছে 'আয়াত'। কুদরতের নিদর্শনকে বলা হয় 'আয়াত'। যা কেবল আল্লাহ তাআলাই করতে পারেন, অন্য কারোরই তা করার সাধ্য নেই; তাকেই বলে 'আয়াত'। যেমন- কোরআনে কারিমের আয়াত সমূহ, আয়াতুল কুরসি, আয়াতুল ইসতিখলাফ, আয়াতুর রাহমান, আয়াতুর রাহমাহ ইত্যাদি। এগুলো আল্লাহ তাআ'লার আয়াত ও কুদরতের নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। অন্য কেউ এমন কথা বলার সামর্থ্য রাখে না।
এভাবে বিয়েকেও কুদরতের নিদর্শন বলা হয়েছে। আপনি বলতে পারেন বিয়ের মধ্যে নিদর্শনের কি আছে? একজন পুরুষ একজন নারীকে বিয়ে করলো, এখানে নিদর্শনের কি হলো যে, তা কেবল আল্লাহ তাআ'লা-ই করতে পারেন, অন্য কেউ পারে না?! তাহলে বিয়ের মধ্যে 'আয়াত' হওয়ার বৈশিষ্ট্যটা আসলে কী? খতিব সাহেব খুতবা পড়ে দিলেন। মাওলানা আনসারী সাহেব খুব ভালো করে খুতবা পড়লেন। ইজাব কবুল হয়ে গেল। এখানে কুদরতের নিদর্শন কী হলো?
এখানে কুদরতের নিদর্শন হলো, দুটি কথা বলার আগে দুজন নারী-পুরুষের পারষ্পরিক কোন ধরনের সম্পর্ক ছিল না। একজন আরেকজনের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিল। যদি তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থেকে থাকে তবুও, কারণ আত্মীয়তার সম্পর্ক তো অনেকের সাথেই থাকে। (আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকলেও) তাদের দুজনের মাঝে আন্তরিক কোন সম্পর্ক অবশ্যই ছিল না। একে অপরের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। উভয়ের হৃদয়ে কারো কোন স্থান নেই।
কিন্তু যখনই চারটি শব্দ (কাবিলতু) বলা হলো। ইজাব-কবুল হয়ে গেল। পুরো বিপ্লব সৃষ্টি হয়ে গেল! এখন এই পুরুষের হৃদয় ওই নারীর হৃদয়ের সাথে জড়িয়ে গেছে! এমন সময় যদি সংবাদ আসে যে, তোমার স্ত্রী কষ্টে আছে, তাহলে তার কষ্টে সেও ব্যথিত হবে। তারও অন্তর পুড়বে। যদি বিয়ে হওয়ার আগে কষ্টের সংবাদ আসতো, তাহলে এই সংবাদকে এতো গুরুত্ব দিত না। সে বরং বলতো, হাজার হাজার নারীরা কষ্টে আছে। সে কষ্টে থাকলে আমার কি? কিন্তু চারটি শব্দ উচ্চারণ করলো, আর হৃদয়ে হৃদয় মিশে গেলো!
ঠিক তেমনি ঐ নারী যদি জানতে পারে যে, যার সাথে তার বিয়ে হয়েছে সে কষ্টে আছে, তাহলে সেও পেরেশান হয়ে যায়। স্বামীর কষ্টে তারও হৃদয় ব্যথিত হয়। কিন্তু বিয়ে হওয়ার আগে পঞ্চাশ বারও যদি খবর আসতো, তাহলে সে কোনো রিয়েক্ট দেখাতো না। উল্টো বলতো, হাজারো পুরুষ কষ্টে আছে। পরিচিত আত্মীয়-স্বজন অনেকেই কষ্টে আছে, আমার পেরেশান হওয়ার কোন প্রয়োজন আছে? কোন প্রয়োজন নেই!
কিন্তু দুটি কথা বলার পরে এই যে বিশাল বিপ্লব সৃষ্টি হল, তা আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কে করতে পারে? দুটি হৃদয়কে একেবারে বেঁধে দিয়েছেন! একটু আগেই একজনের কাছে আরেকজন সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিল, এখন দুজন দুজনার! একটু আগে কোন সম্পর্ক ছিল না, কয়েক মিনিট পরে গভীর সম্পর্ক! এই পুরুষের সাথে ঐ নারীর কোন বাঁধন ছিল না, একটু পর দুজন জড়িয়ে গেলো মধুর বাঁধনে!
এমতাবস্থায় স্বামীর কাছে যদি স্ত্রীর ব্যাপারে কোনো খুশির সংবাদ আসে, স্বামীর হৃদয় খুশিতে পূর্ণ হয়ে যায়। মনে মনে সে বলতে থাকে, যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তাঁর আনন্দের সংবাদ শুনলাম। ঠিক তেমনি স্বামীর কোন খুশির সংবাদ স্ত্রীর কানে গেলে সেও খুশি হয়। সেও তার হৃদয়ে পুলক অনুভব করে। মনে মনে সেও বলতে থাকে, আমার সাথে যার বিয়ে হয়েছে সে সম্মান লাভ করেছে। সে তখন তার পরিচিত নারীদের মাঝে মাথা উঁচু করে বলতে পারে, আমার জন্য গর্বের বিষয় আমার স্বামী সাফল্য অর্জন করেছে। অপরদিকে তার স্বামীও তার পরিচিত পুরুষদের মাঝে স্ত্রীর সুখে আনন্দ প্রকাশ করে। কিন্তু চারটি শব্দ বলার আগে না পুরুষের মাথা উঁচু হত না নারীর।
এই যে বিশাল বিপ্লব সাধিত হলো, এটা আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কে করতে পারে?! আমি আপনি তো এটা করতে পারব না। নিদর্শন হওয়ার অর্থ এটাই যে, হৃদয়ের মাঝে, আত্মার মাঝে বিপ্লব সৃষ্টি হওয়া। একটু আগে কি ছিল আর এখন কি হয়ে গেলো?! এজন্য আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
﴿ وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾
আর তাঁর অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে যে, তিনি তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করো। এবং তোমাদের মাঝে 'মাওয়াদ্দা' এবং 'রাহমাহ'র সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছেন। নিশ্চয় চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে বহু নিদর্শন। [সূরা রূম, আয়াত ২১]
-খুতুবাতে হাকিমুল ইসলাম, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৭৬-৪৭৮

স্বামী স্ত্রীর মধুর বাঁধন
০ টি মন্তব্য      ৩২০ বার পঠিত         

লেখাটি শেয়ার করতে চাইলে: