অনলাইনে আছেন

  • জন ব্লগার

  • ২৯ জন ভিজিটর

কর্ডোভা মসজিদঃ মুসলিম শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার অনন্য নিদর্শন...

লিখেছেন জিবরান শনিবার ১৫ জানুয়ারী ২০২২
 
৭১১ ঈসাব্দে স্পেনে মুসলিম শাসনের সূত্রপাত হয় মুর জাতির মাধ্যমে। মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর স্পেন আন্দালুসিয়া নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মুসলিমদের শাসনাধীন আন্দালুসিয়ার রাজধানী ছিল কর্ডোভা, আরবিতে কর্ডোভার উচ্চারণ কুরতুবা।
.
মুসলিম শাসনামলে সভ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায় স্পেন। এ সময় স্পেনে শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটে। নির্মিত হয় অনেক লাইব্রেরি, হাম্মাম (গোসলখানা) ও মসজিদ। অসাধারণ শিল্পনৈপুণ্যে তৈরি অসংখ্য মুসলিম স্থাপনা যেকোনো মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম। এসব স্থাপনার মধ্যে কর্ডোভা মসজিদ অন্যতম।
.
তৎকালীন খলিফা আব্দুর রহমানের শাসনামলে ৭৮৪ সালে নির্মিত হয় ঐতিহাসিক এই মসজিদ।এই মসজিদের ভেতরের ও বাইরের কারুকাজ যে কারোই নজর কাড়বে। বিখ্যাত সিরীয় স্থপতির নকশার নির্মিত হয় এর দৃষ্টিনন্দন সকল নকশা। এতে ব্যবহৃত হয় সোনা,রূপা ও তামা। এর মেহরাবে রয়েছে আল্লাহর নিরান্নব্বইটি আল্লাহর পবিত্র নাম। যা সোনার গলিত কালিতে লিখিত।
.
এই মসজিদ নির্মাণে আরো ব্যবহার করা হয়েছে মার্বেল পাথরসহ অনেক মূল্যবান পাথর। আবার তাতে ও রয়েছে নিখুঁত কারুকাজের ব্যবহার। মূল মসজিদের আয়তন হচ্ছে ১,১০৪০০ স্কয়ার ফিট। এর থামের সংখ্যা ৪৫৬ টি। প্রতিটি থামের উপরে গোলাকার যে আঁচ রয়েছে, এটাকে বলা হয় হর্স শো তথা ঘোড়ার পায়ের আকৃতির ডিজাইন।
.
বাহিরে রয়েছে ৯টি দরজা ও অভ্যন্তরে রয়েছে ১১ টি দরজা। নির্মাণের পাঁচশ বছরের বেশি সময় এখানে নামাজ আদায় করেন মুসলমানরা। ইসলামি শিক্ষা ও সালিশ কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হতো এবং এটিই ছিলো মুসলিম শাসনের কেন্দ্রবিন্দু।
.
ইউরোপিয়ানরা এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে গিয়ে গর্ববোধ করতো। এই মসজিদেই বিশ্ববিখ্যাত তাফসির তাফসিরে কুরতুবীর দারস চলতো। মহান মনিষী ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহয়া র দারস চলতো। ইমাম ইবনু হাযম যাহেরী (রাহি.) র ফিকহবিষয়ক প্রবন্ধ পঠনপাঠন চলতো। ইমাম ইবনুল আরবী (রাহি.) তাসাউফের সূক্ষ্ম ও জটিল বিষয়ের দারস প্রদান করতেন এখানে বসেই। এমনকি ইমাম বাক্বী ইবনু মাখলাদ (রাহি.) র মতো মুহাদ্দিস হাদিসের দারস উপস্থাপন করতেন এই কর্ডোভা মসজিদেই।
.
কিন্তু মুসলিমদের এই সুখের সংসারে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দেয় ১২৩৬ ঈসাব্দে। মুসলিমদের অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে এগারো শত শতকের দিকে আন্দোলোসিয়া বা স্প্যনের খেলাফত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছোট ছোট প্রদেশে বিভক্ত হয়ে যায়। যার সুযোগ গ্রহণ করে খ্রিষ্টান রাজা তৃতীয় ফার্ডিনান্দ ও রাণী ইসাবেলা। তারা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করে স্পেন দখল করে নেয়।
.
এরপর মসজিদটিকে আর বাকি রাখা হয় নি। রোমান ক্যাথলিক গির্জায় রুপান্তরিত করে। সেখানে নামাজ পড়া সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কেউ যেন রুকুও না করতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন স্থানে সিকিরিউটি লোক রাখা হয়েছে৷ ২০১০ সালে এক দল মুসলিম পর্যটক শুধু রুকু করতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন৷
.
তবে ইতিহাসের প্রথম বার শুধুমাত্র মহাকবি আল্লামা ইকবাল কর্ডোভা মসজিদে গিয়ে প্রশাসনের বিশেষ অনুমতি নিয়ে মিহরাবে দু রাকাত নামাজ আদায় করার সুযোগ পান। নামাজ শেষে তিনি দীর্ঘ মুনাজাত করেন। এই মসজিদের সৌন্দর্য ও ও ঐতিহ্যে মুগ্ধ হয়ে আটটি কবিতা লিখেন তিনি। যা পরবর্তীতে বাবে জিবরীল নামে কবিতাকারে প্রকাশিত হয়েছে।
.
১৯৮৪ সালে ঐতিহাসিক এ স্থাপনাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃত দেয় ইউনেস্কো। দীর্ঘ প্রায় ৭'শ বছর মুসলিম সভ্যতার অনন্য এই নিদর্শনটি এখন পর্যন্ত গির্জা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

কর্ডোভা মসজিদ
০ টি মন্তব্য      ২৪১ বার পঠিত         

লেখাটি শেয়ার করতে চাইলে: