অনলাইনে আছেন

  • জন ব্লগার

  • ২০ জন ভিজিটর

একজন সাহাবীর বিয়ে...

লিখেছেন জিবরান শনিবার ১৫ জানুয়ারী ২০২২
এখনকার সময়ে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া কোনো দেশে একজন আগন্তুকের মূল্য কতটুকু? একজন নাগরিক যেসব সুবিধা লাভ করেন, একজন পাসপোর্ট-ভিসাহীন আগন্তুক সেই সুবিধাটুকু পান না।
 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়কার একজন সাহাবী ছিলেন এরকম পাসপোর্ট-ভিসাহীন। এখনকার সময়ে কোনো নির্দিষ্ট দেশের পাসপোর্ট কারো থাকলে অনেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি অযাচিত সুবিধা লাভ করেন। আর তখনকার সময়ে কেউ সম্মানিত কোনো গোত্রের হলে এরকম সুবিধা লাভ করতেন।
এই অর্থে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই সাহাবীর কোনো পাসপোর্ট-ভিসা ছিলো না। তাঁর বংশ পরিচয় ছিলো অজ্ঞাত। এমনকি তাঁর মা-বাবার পরিচয়ও ছিলো অজ্ঞাত। একজন সাধারণ নাগরিক যেরকম সুবিধা ভোগ করে, তিনি সেইসব সুবিধা ভোগ করা থেকে বঞ্চিত থাকেন। এমনকি তাঁর নামটিও ছিলো অস্বাভাবিক এবং অপূর্ণ- জুলায়বীব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। জুলায়বীব নামের অর্থ খর্বাকৃতি। তিনি ছিলেন আর দশজন সাহাবীর চেয়ে ছোট আকৃতির এবং দেখতে ছিলেন কুৎসিত।
সমাজে তিনি ছিলেন এক উপহাসের পাত্র। তাঁকে পছন্দ করা তো দূরের কথা, তার সাথে মিশতেও মানুষ গা গিনগিন করতো। বনু আসলাম গোত্রের আবু বারযা তার স্ত্রীকে সতর্ক করে দেন,জুলায়বীব যেন ঘরে না ঢুকে।
 
সমাজে তাঁর অবস্থা এমন ছিলো যে কেউ তাঁর সাথে তাদের মেয়ে বিয়ে দিতে চাইতো না।
 
কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদের খোঁজখবর রাখতেন। তাঁদের চাহিদার ব্যাপারেও ছিলেন সচেতন। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক আনসার সাহাবীকে গিয়ে বললেন, “তোমার মেয়েকে বিয়ে দেবার জন্য আমার হাতে তুলে দাও।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখে এই প্রস্তাব শুনে সেই আনসারী বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটাতো অনেক মর্যাদার ব্যাপার (আপনি আমার মেয়েকে বিয়ে করবেন)।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সংশোধন করে দিয়ে বললেন, “আমি আমার জন্য বলছি না, জুলায়বীবের জন্য বলছি।”
 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখে এই কথা শুনে আনসারী সাহাবীর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। তিনি বললেন, “আমি এই বিষয়ে আমার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করতে চাই।” লোকটি স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করতে গেলে স্ত্রী বললেন, “কক্ষনো না। জুলায়বীবের সাথে আমাদের মেয়েকে বিয়ে দেবো না।”
 
মা-বাবার কথোপকথন মেয়ে শুনতে পান। পরামর্শ শেষে যেই মুহূর্তে বাবা যাচ্ছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে তখন মেয়ে বলে উঠলো, “আমার বিয়ের প্রস্তাব কে পাঠিয়েছেন?” তার মা তাকে পুরো ঘটনা খুলে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুলায়বীবের সাথে তার বিয়ে দেবার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এবং তারা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছেন।
 
মায়ের মুখে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কথা শুনে মেয়েটি এই আয়াত তেলাওয়াত করলো: “আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোনো মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিন নারীর জন্য সে বিষয় ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকে না। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলো, সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হলো।” (সূরা আহযাব ৩৩: ৩৬)
 
তারপর মা-বাবাকে বললো, “আপনারা কি আল্লাহর রাসূ্লের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছেন? আমাকে জুলায়বীবের কাছেই বিয়ে দিন, নিশ্চয়ই এতে আমার ক্ষতি হবে না। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন সেই প্রস্তাবে আমি সন্তুষ্ট।”
মেয়ের মুখে এমন বুদ্ধিদীপ্ত কথা শুনে রাসূলুল্লাহ আল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জন্য দু’আ করেন, “হে আল্লাহ! এই মেয়ের জীবনে কল্যাণ বর্ষণ করুন এবং তাঁর জীবনকে পঙ্কিল করবেন না।” [ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ: ৪০৩৫, আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১২৩৯৩]
 
বলা হয়ে থাকে, আনসারদের মধ্যে তাঁর চেয়ে যোগ্যতর পাত্রী আর ছিলো না। জুলায়বীব রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে তাঁর বিয়ে হয়ে গেল।

সাহাবীর বিয়ে
০ টি মন্তব্য      ৪২৯ বার পঠিত         

লেখাটি শেয়ার করতে চাইলে: