অনলাইনে আছেন

  • জন ব্লগার

  • ১৬ জন ভিজিটর

আজ সেই লজ্জার দিন, যেদিন ক্রুসেডাররা জেরুজালেম দখল করে নেয়...

লিখেছেন Muhammad Sajal বুধবার ১৫ জুলাই ২০২০

১০৯৯ সালের আজকের দিনে পতন ঘটে জেরুজালেমের, ইসমাইলী শিয়া নেতৃত্বাধীন ফাতিমীয় খেলাফতের হাত থেকে শহরটি চলে যায় ক্রুসেডারদের হাতে, যার ফলে যাত্রা শুরু করে কিংডম অফ জেরুজালেম, যা টিকে ছিল পরবর্তী প্রায় ২ শতাব্দী পর্যন্ত।

তবে আজকের এই দিনটি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ক্রুসেডারদের জন্য এক বিজয় দিবস হলেও মুসলিম ও ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের জন্য ছিল নিঃসন্দেহে ভয়াবহ এক দিন, যেজন্য প্রায় সোয়া ন'শ বছর পরেও প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানীতে সেদিনের ভয়াবহতা যেকারও বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট।

কেন? কারণ শহরটি বিজয়ের পর সেখানকার অধিবাসী মুসলিম ও ইহুদীদের স্রেফ কচুকাটা করা হয় সেদিন। রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়া বলতে যা বোঝায় ঠিক সেটাই ঘটেছিল সেদিনের জেরুজালেমে- 'দ্য ফার্স্ট ক্রুসেড - অ্যা নিউ হিস্টোরি' বইয়ে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।

ঠিক কতজন যে মারা গিয়েছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক আছে। উইলিয়াম অফ টায়ার বলেন, সংখ্যাটা ১০ হাজার। ম্যাথিউ অফ এডেসার মতে তা ৬৫ হাজার। ওদিকে ইবন আল-আথিরের মতে সংখ্যাটা ৭৫ হাজারের মতো। দ্য সিজ অফ জেরুজালেম বইয়ের লেখক কনর কস্টিক তৎকালীন জেরুজালেমের জনসংখ্যা বিবেচনায় সংখ্যাটাকে ৪০ হাজারের মতো বলে মতামত দিয়েছেন, যাদের মাঝে অনেক শরণার্থীও ছিল যারা ক্রুসেডার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে এই শহরে এসে আশ্রয় নেয়।

মুসলিমরা আশ্রয় নিয়েছিল আল-আকসা মসজিদ, ডোম অফ দ্য রক এবং হারাম আশ-শরীফে। লাভ হয়নি একটুও। নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার হতে হয় তাদের। উইলিয়াম অফ টায়ারের মতে, "মৃতদের সংখ্যা এতই বেশি ছিল যে তাদের দিকে তাকানোও ছিল ভয়ের ব্যাপার। চারদিকে তাদের ছিন্ন-ভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ছিল। মাটি রক্তবন্যায় লাল রঙ ধারণ করেছিল। আরও ভয়ানক ছিল বিজয়ী সেনাদের দিকে তাকিয়ে থাকাটা, কারণ তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছিল রক্তে রঞ্জিত।" উল্লেখ্য, উইলিয়াম অফ টায়ারের জন্ম এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রায় ৩০ বছর পর হলেও তার বর্ণনাকে এই ঘটনার জন্য বেশ নির্ভরযোগ্য হিসেবেই ধরেন অনেকে।

প্রথম ক্রুসেডের ল্যাটিন ধারাবিবরণী জেস্টা ফ্র্যান্‌কোরামে উল্লেখ করা হয়, ক্রুসেডাররা টেম্পল অফ সলোমনে আশ্রয় নেয়া কাউকেই ছাড় দেয়নি, রক্ত এতটাই প্রবাহিত হয় যে সৈন্যদের গোড়ালি পর্যন্ত ডুবে গিয়েছিল রক্তে। ওদিকে এই ক্রুসেডে কাহিনীকার হিসেবে অংশ নেয়া রেমন্ড অফ অ্যাগুইলার্সের মতে, সেদিন টেম্পল মাউন্টে নিহতদের রক্ত উঠে এসেছিল সৈন্যদের হাঁটুর সমান উচ্চতায় আর এর ভেতর দিয়েই তারা এগিয়ে চলেছিল!

সৈন্যরা যাকে সামনে পাচ্ছিল, তাকেই শেষ করে দিচ্ছিল। আর কারও প্রতি করুণা হলে তাকে বন্দি করছিল। এভাবেই চলতে থাকে মানবেতিহাসের ভয়াবহ এক হত্যাযজ্ঞ। পরবর্তীতে মৃতদের গন্ধে ভারী হয়ে ওঠে শহরের পরিবেশ। তখন এই বন্দীদের দিয়েই শহরের বাইরে মৃতদেহগুলো স্তুপাকারে জমা করা হয়। এরপর পিরামিড আকৃতির চিতা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় এই মৃত দেহগুলো।

অ্যালবার্ট অফ আচেনের মতে, এই হত্যাযজ্ঞ কেবল একদিনেই কিংবা একবার হয়েই যে থেমে যায় এমনটা না। বরং বিজয়ের তৃতীয় দিনেও বিচারের নাম করে আবারও বড় রকমের হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।

এতক্ষণ যে হত্যাযজ্ঞের কথা বলা হলো, এর পুরোটাই চালানো হয় জেরুজালেমের মুসলিম অধিবাসীদের উপর। তবে শহরটির ইহুদীরাও বাদ যায়নি। 'ক্রস পারপাসেস: দ্য ক্রুসেডস' বইয়ের লেখক থমাস এফ. ম্যাডেনের মতে, সেদিন জেরুজালেম রক্ষায় মুসলিমদের পাশাপাশি অস্ত্র তুলে নিয়েছিল ইহুদীরাও। ইবন আল-ক্বালানিসির মতে, খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা শহরের ভেতর প্রবেশ করলে ইহুদীরা আশ্রয় নেয় তাদের সিনাগগে। তারা সেখানে অবস্থান করাকালেই তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়, ফলে মৃত্যু হয় তাদের। অবশ্য সমসাময়িক আরেক ইহুদী সূত্রমতে সিনাগগ ধ্বংসের ব্যাপারে নিশ্চিত করা হলেও সেদিন এর ভেতরে জেরুজালেমের কোনো ইহুদী অধিবাসী অবস্থান করছিল কি না তা নিশ্চিত করে বলা হয়নি।

হ্যাঁ, আজ ১৫ জুলাই। জেরুজালেমের আকাশে-বাতাসে আজও প্রতিধ্বনিত হয় সেদিনের সেই নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া নর-নারী, শিশু-কিশোরদের আর্তচিৎকার। আজ সেই ১৫ই জুলাই...


জেরুজালেম ক্রুসেডার
০ টি মন্তব্য      ৪২১ বার পঠিত         

লেখাটি শেয়ার করতে চাইলে: