বিশ্বের ইতিহাসে যখন যেখানে ধন সম্পদের প্রাচুর্য ঘটেছে বিজ্ঞানীরা সেদিকেই ছুটেছেন। প্রাচীনকালে মিশর-মেসোপোটেমিয়া, অষ্টম শতকে উমাইয়া খেলাফত কর্তৃক জয় করা স্পেনের কর্দোবায়, তারপর আব্বাসীয় খিলাফতের রাজধানী বাগদাদ থেকে চেঙ্গিস খানের দরবার হয়ে তাইমুরের সমরকন্দ অবশেষে বিজ্ঞান - প্রযুক্তি দিয়ে সারা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন অটোমান শাসকেরা। পৃথিবীর সেরা ডেফেন্ডেড শহর কনস্ট্যান্টিনোপন বিজয়ী অটোমান সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ বলেছিলে " সম্ভবের সীমা আসলে কতটুকু তা জানতে হলে অসম্ভব কিছু করার চেষ্টা করতে হয়"। সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহর সময়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা সময়ের চেয়ে ৪০০ বছর এগিয়ে ছিল।
মাঝখানে চেংগিস খানের কিংবা তার বংশধরদের শাসনের ৬০/৭০ বছর বাদ দিলে প্রায় দের হাজার বছর যাদের হাতে ছিল পৃথিবীর ক্ষমতার কাঠামো ও সম্পদের প্রাচুর্য - তারাই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিজ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি এবং তাদের হাতে গড়া প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর এগিয়ে যাচ্ছে আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। তারা বিজ্ঞানকে বৃহত্তর মানব কল্যাণের জন্য কাজে লাগিয়েছেন এবং বিজ্ঞানের ধ্বংসাত্মক আবিষ্কারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন।
যথা-
১. রসায়নের জনক - (জাবির ইবনে হাইয়ান)
২. বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভূগোলবিদ - (আল-বেরুনি)
৩. আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক - (ইবনে সিনা)
৪. হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল আবিষ্কারক - (ইবনুল নাফিস)
৫. বীজগর্ণিতের জনক - (আল-খাওয়ারিজমি)
৬. পদার্থ বিজ্ঞানে শূন্যের অবস্থান নির্ণয়কারী - (আল-ফারাবি)
৭. আলোক বিজ্ঞানের জনক - (ইবনে আল-হাইছাম)
৮. এনালিটিক্যাল জ্যামিতির জনক - (ওমর খৈয়াম)
৯. সাংকেতিক বার্তার পাঠোদ্ধারকারী - (আল-কিন্দি)
১০. গুটিবসন্ত আবিষ্কারক - (আল-রাজি)
১১. টলেমির মতবাদ ভূল প্রমাণকারী - (আল-বাত্তানি)
১২. ত্রিকোণমিতির জনক - (আবুল ওয়াফা)
১৩. স্টাটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা - (ছাবেত ইবনে কোরা)
১৪. পৃথিবীর আকার ও আয়তন নির্ধারণকারী - (বানু মুসা)
১৫. মিল্কিওয়ের গঠন শনাক্তকারী - (নাসিরুদ্দিন তুসি)
১৬. এলজাব্রায় প্রথম উচ্চতর পাওয়ার ব্যবহারকারী - (আবু কামিল)
১৭. ল’ অব মোশনের পথ প্রদর্শক - (ইবনে বাজ্জাহ)
১৮. এরিস্টোটলের দর্শন উদ্ধারকারী - (ইবনে রুশদ)
১৯.ঘড়ির পেন্ডুলাম আবিষ্কারক - (ইবনে ইউনূস)
২০. পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয়কারী - (আল-ফরগানি)
২১. পৃথিবীর প্রথম নির্ভুল মানচিত্র অঙ্কনকারী - (আল-ইদ্রিসী)
২২. বিশ্বের প্রথম স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের আবিষ্কারক - (আল-জাজারি)
২৩. সূর্যের সর্বোচ্চ উচ্চতার গতি প্রমাণকারী - (আল-জারকালি)
২৪. মানবজাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রণেতা - (আবুল ফিদা)
২৫. বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের অগ্রদূত - (ইবনে আল-শাতির)
২৬. ভূগোলে বিশ্বকোষ প্রণেতা - (আল-বাকরি)
২৭. প্ল্যানেটারি কম্পিউটার আবিষ্কারক - (আল-কাশি)
২৮. বীজগণিতের প্রতীক উদ্ভাবক -(আল-কালাসাদি )
১০০০ খৃষ্টাব্দে ইউরোপ যখন স্যাঁতস্যঁতে কাদা-পানিতে গিজিগিজি করছে, তখন আন্দালুসের ( ইসলামি সভ্যতার রাজধানী এবং পৃথিবীর জ্ঞান বিজ্ঞানের চালিকা শক্তি) অলি-গলিতে পাকা সড়ক! ইউরোপ যখন ঘণ আঁধারে নিমজ্জিত, আন্দালুসের রাস্তায় রাস্তায় তখন পথচারীদের জন্য সড়ক আলোকিত করে জ্বলছে বাতি!!
ইউরোপে সবচেয়ে বড় পাঠাগারও যখন মাত্র ছয়শতের মত বই নিয়েই কোন মতে দাঁড়িয়ে আছে, তখন আন্দালুসের (বর্তমান স্পেন এবং পূর্তগাল ) পাবলিক লাইব্রেরীটা অর্ধমিলিয়ন তথা পাঁচ লক্ষাধিক বই-এ ঠাসা!
পনের শতাব্দীর মধ্যভাগে ধর্মান্ধতার অন্ধকারে ইউরোপে যখন ইহুদিদের আগুনে পুড়িয়ে মারা হচ্ছিল, তখন অটোমান সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ তার রাজ্যে আশ্রয় দিয়েছিলেন ইহুদি, খ্রিস্টান, স্লাভ এবং প্যাগানসহ সকল ধর্মের মানুষকে। অটোমান পাশার সমান ক্ষমতা দিয়ে নেতা বানালেন অর্থডক্স খ্রিস্টানের নেতাকে। জার্মানি থেকে পালিয়ে আসা ইহুদিকে করেছিলেন আন্ড্রিয়ানোপলের প্রধান রাব্বি।
বর্তমানে শক্তিহীন রাস্ট্র সভ্য হওয়ার বিষয়ে জ্ঞান দিতে পারেনা। তাই আগ্রাসী শক্তিগুলো যা দিচ্ছে তা আমরা অমৃত বলে গিলে খাচ্ছি।