অনলাইনে আছেন

  • জন ব্লগার

  • ১৮ জন ভিজিটর

আয়া সোফিয়াকে মসজিদে 'ফিরিয়ে নেয়া' ইস্তাম্বুলকে ইসলামে ফিরিয়ে নেয়ার প্রজেক্টেরই একটা অংশ...

লিখেছেন Muhammad Sajal শনিবার ১১ জুলাই ২০২০

আয়া সোফিয়াকে মসজিদে 'ফিরিয়ে নেয়া' ইস্তাম্বুলকে ইসলামে ফিরিয়ে নেয়ার প্রজেক্টেরই একটা অংশ। এটা অবশ্যই রাজনৈতিক চাল, সন্দেহ নাই। মুসলিমরা দেড় হাজার বছর ধরেই রাজনীতি করে এবং রাজনীতির চাল দুনিয়ার সবাই দিতে পারবে মুসলমান রাজনীতিবিদরা ছাড়া, এই মানসিকতা যারা ধারন করে তারা নিজেদের দাস মানসিকতার বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহন করছেন মাত্র।

আয়া সোফিয়া একটা স্থাপনা হিসেবে সবসময়েই ছিল রাজনৈতিক। রাজনৈতিক ক্ষমতার হাতবদল হয়েই এটা প্রথম প্যাগান উপাসনালয় থেকে চার্চে পরিনত হয়, পরে এটাকে সেকালের দুনিয়ার বৃহত্তম চার্চে রুপ দেয়া হয়।

আমরা অনেকেই যেটা জানি না তা হল মেজর ক্রুসেডগুলোর মধ্যে অন্তত একটি খ্রিস্টানরা নিজেদের ভেতর করেছে। চতুর্থ ক্রুসেডে ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা অর্থডক্স খ্রিস্টানদের ওপর রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে কন্সটান্টিনোপল জয় করে। রোমান লাইব্রেরী পোড়ানোর দায় ওরিয়েন্টালিস্টরা সুলতান ফাতিহ মেহমেদকে দেয়, বাস্তবতা হচ্ছে ১২০৪ সালের ফোর্থ ক্রুসেডেই তারা সেই লাইব্রেরী পুড়িয়ে ফেলে। এসময় তারা চার্চ অফ হোলি এপোসলস এবং হাগিয়া সোফিয়াকে অর্থডক্স চার্চ থেকে ক্যাথলিক চার্চে কনভার্ট করে। ১২৬১ সালে রোমান পালাইলোগোস ডাইন্যাস্টির মাইকেল দ্যা এইটথ যখন পুনরায় কন্সটান্টিনোপল জয় করেন তখন কিন্তু আবার হাগিয়া সোফিয়া অর্থডক্স চার্চে পরিনত হয়।

খাকান উল বাহরাইন সুলতানুল মুয়াজ্জাম ফাতিহ মেহমেদ খান যখন কন্সটানটাইনকে যুদ্ধের আগে আত্মসমর্পনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং এর বিনিময়ে মোরিয়া উপদ্বীপে অন্য একটা বিশাল ভুখন্ডের প্রস্তাব করেছিলেন, তখন সেই শান্তির প্রস্তাব কন্সটানটাইন গ্রহন করেন নাই। এরপর যুদ্ধ করে জয় করা কন্সটান্টিনোপলের চার্চগুলো এমনিতেই ছিল উসমানী সালতানাতের শাসকের ইচ্ছাধীন, আমি যতটা জানতে পেরেছি তাতে সে সময়ে কন্সটান্টিনোপলে মোট ৩৯টা চার্চ ছিল।

এরমধ্যে আট অথবা নয়টা চার্চ ছিল রোমান সম্রাটের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তাই, যুদ্ধজয় সূত্রে সেগুলি এমনিতেই উসমানী সুলতানের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিনত হয়। কিন্তু তবু, অর্থডক্স খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে এই চার্চগুলোর ক্ষতিপুরন হিসেবে সুলতান বিপুল অর্থ দিয়েছিলেন অথবা বলা হয়, কিনে নিয়েছিলেন। ক্যাথলিকদের মত যা ইচ্ছা তাই করেন নি।

হোয়াটএভার, আমি স্রেফ দেখাতে চেয়েছি, ইস্তাম্বুলের অধিকার যখন যে মতাদর্শের হাতে ছিল, তার অনুসারীরা আয়া সোফিয়াকে নিজেদের মত অনুযায়ী বদলে দিয়েছে, এটাই ইতিহাস। শিক্ষিত মুসলমানদের আজকাল কানধরার একটা প্রবণতা আছে, কোন কিছু একটা হলে কোনভাবে যদি সেখানে কান ধরার একটা কারন পাওয়া যায় তবে কান না ধরে শিক্ষিত মুসলমানরা থাকতে পারে না।

এই কানধরার বদভ্যাস ছাড়াটা জরুরী নয়তো দুনিয়ায় মান সম্মান নিয়ে বাচা মুশকিল হয়ে যাবে।

আয়া সোফিয়াকে মসজিদে কেন ফিরিয়ে নেয়া হল এই প্রশ্নের চেয়ে আয়া সোফিয়াকে কেন জাদুঘরে পরিনত করা হল সেই প্রশ্নটা তোলা না তোলার ওপর আত্মপরিচয়ের ব্যাপারে আমরা কতটুকু সচেতন সেটা বোঝা যায়।

আমি খুব স্পষ্টভাবেই জানি, আয়া সোফিয়াকে মসজিদে ফিরিয়ে নেয়াটা এরদোয়ানের একটা রাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ। যাদের দৃষ্টিসীমা স্বল্পপাল্লার, তারা এটাকে নির্বাচনে জেতার জন্য এরদোয়ানের কৌশলের অংশ হিসেবে দেখেন। যারা দুরপাল্লার রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী তারা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে সক্ষম, আয়া সোফিয়ায় ইসলাম, আযান ও নামায ফিরে আসা মানে উসমানী আমলের তুর্কী শিরদাড়া যে আবার ফিরে আসছে তা বজ্রকণ্ঠে ঘোষনা করা। কেননা স্থানীয়ভাবে এই ঘোষনায় এরদোয়ান যতটা সুবিধা পাবেন তার চেয়ে অনেক বেশি অসুবিধায় পড়বেন বৈশ্বিকভাবে।
কিন্তু এখানে তিনি আইডিওলজিক্যালি কমিটেড।

ক্রুসেড কোনদিন অফিসিয়ালি শেষ হয় নি। নিকোপলিসের পরেও বারবার ইউরোপের সাদা খ্রিস্টানরা ক্রুসেড ডেকেছে। ব্যর্থতার কারনেই মূলত সেগুলি ইতিহাসে সেভাবে ঠাই পায় নি। কিন্তু ১৬৮৩ সালে শুরু হওয়া সিজ অফ ভিয়েনা, গ্রেট টার্কিশ ওয়ার থেকে শুরু করে ১৯৯৫ সালের আজকের দিনে শুরু হওয়া সেব্রেনিসা গণহত্যার দিন পর্যন্ত ক্যাথলিক-অর্থডক্স খ্রিস্টানরা তাদের এন্টি মুসলিম ওয়ারফেয়ারকে বারবার ক্রুসেড নামেই নামকরন করেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুর্কীর ওপর যে চুক্তিগুলো চাপিয়েছে, তার ভেতর সুস্পষ্ট ছিল তাদের ক্রুসেডার মানসিকতা।

অনেকে চিন্তিত, অন্য ধর্মের লোকেরা আমাদের কি ভাববে তা নিয়ে।
আমরা সর্বোচ্চ টলারেন্স দেখিয়েছি ইতিহাসে, তাতে কি কোন গণহত্যা ঠেকানো গেছে??
সেকালের স্পেন থেকে আজকের জিনজিয়াং, কোথায় তাদের হাত থেকে ইসলাম নিরাপদে ছিল??

আয়া সোফিয়া নিয়ে ইউরোপিয়ান খ্রিস্টানদের আপত্তি তাদের ধর্মীয় ইগোর জায়গা থেকে। ক্রুসেডে হেরে কন্সটান্টিনোপল হারানোর আঘাত সহ্য করা তাদের জন্য কঠিন।

যেসব মুসলমানের এটা নিয়ে আপত্তি, তারা কি নিজেদের বাদামী চামড়ার ক্যাথলিক বা অর্থডক্স মনে করেন নাকি?

 

আয়া মসজিদ
০ টি মন্তব্য      ৪৩৯ বার পঠিত         

লেখাটি শেয়ার করতে চাইলে: