অনলাইনে আছেন

  • জন ব্লগার

  • ১৪ জন ভিজিটর

সাইফ উদ্দিন কুতুজ এবং আইন জালুতের ইতিহাস...

লিখেছেন Muhammad Sajal মঙ্গলবার ১৯ মে ২০২০
মামলুকরা আমীর আন নাসির ইউসুফকে খুজছে। তাকে হত্যা করতে হবে।
আমীর দামিশককে হালাকু খানের হাতে তুলে দিতে চান, যা মামলুকরা কোনভাবেই মানতে রাজি না। তাকে খুজতে শহর তোলপাড় করে ফেললো মামলুকরা।
সারারাত খুজেও আন নাসির ইউসুফকে পাওয়া গেল না।
দু দিন পর জানা গেল, তিনি মিশরের দিকে রওনা দিয়েছেন। তার অধিকাংশ আমীর, যারা মুখে লড়াইয়ের কথা বলতেন, তারা সবাই যার যার ধন-সম্পদ, বউ-বাচ্চা নিয়ে ছুটেছেন মিশরের দিকে।
মোঙলরা এমন এক দূর্যোগ, যা থেকে মানুষ কেবল পালাবার কথাই ভাবতে পারে।
মিশর সীমান্তে আসার পর নাসির জানতে পারলেন, তাকে মিশরে ঢুকতে দেয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে।
নাসির আশ্রয় চেয়ে চিঠি লিখলেন মিশরের সুলতান সাইফ উদ্দীন কুতুজের কাছে।
কুতুজ জবাব দিলেন,জনগনের দেয়া করের টাকায় এতদিন আমীরি হালতে থেকে এখন তাদের ফেলে আমার কাছে আসা হয়েছে??মিশরে তোমার মত কাপুরুষের কোন জায়গা নেই।
আন নাসির ইউসুফের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সুলতানের আদেশে কেড়ে নেয়া হল তার সমস্ত সম্পদ, তার স্ত্রী-সন্তানকে মানবিক কারনে মিশরে ঢুকতে দেয়া হল,কিন্তু তাকে ও তার আমীরদের ঢুকতে দেয়া হল না।
আমীররা কয়েকদিনের ভেতরেই নাসিরকে ছেড়ে পালালেন।তারপর, একদিন নাসিরকে বন্দী করে মামলুকরা পাঠিয়ে দিল হালাকু খানের কাছে।
কাপুরুষদের বাহরিয়্যা মামলুকরা মনে-প্রাণে ঘৃণা করতো।
সুলতান সাইফ উদ্দীন কুতুজের কাছে হালাকু খানের চিঠি এসেছে।
চিঠিতে লেখাঃ
"পূর্ব ও পশ্চিমের সমস্ত রাজাদের রাজা, সম্রাটদের সম্রাট, খানদের খান খাকানের পক্ষ থেকে, মামলুক কুতুজের প্রতি, যে কি না আমাদের তলোয়ারের নিচ থেকে পালিয়েছে, শোন!!
অন্য সাম্রাজ্যগুলোর কি হয়েছে, একবার চিন্তা করে আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করো। তোমার নিশ্চয়ই জানা আছে যে আমরা এক বিশাল সাম্রাজ্য জয় করেছি এবং পৃথিবীর বুকে যে বিশৃঙ্খলা-জঞ্জাল জমেছিল, তা সাফ করেছি। আমরা বিশাল এক ভুখণ্ড জয় করে পাইকারীভাবে হত্যা করেছি এর জনগণকে। তুমি আমাদের সেনাবাহিনীর ত্রাস থেকে কোনভাবেই পালাতে পারবে না।
তুমি কোথায় পালাবে??? আমাদের ঘোড়াগুলো দ্রুতগামী, আমাদের তীর ধারালো, আমাদের তলোয়ার বজ্রের মত, আমাদের হৃদয় পর্বতের মত অনড়, আমাদের সৈন্যসংখ্যা মরুভুমির বালির মত অগণিত।
 
আমাদের না সেনাবাহিনী দিয়ে ঠেকানো যায়, না থামানো যায় দূর্গ দিয়ে। তোমাদের স্রষ্টার কাছে করা কান্নাকাটি আমাদের বিপরীতে কোন কাজেই আসবে না। আমরা না চোখের পানিতে গলে যাই আর না মধুর কথায় ভুলে যাই।
 
তারাই আমাদের তলোয়ার থেকে বাচতে পারে, যারা আমাদের কাছে নিরাপত্তা ভিক্ষা করে। যুদ্ধের আগুন জ্বলে ওঠার আগেই এই চিঠির জবাব দাও। যদি লড়াই করো, তবে তোমরা চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। আমরা তোমাদের মসজিদগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে দেবো, আমরা তোমাদের প্রভু আল্লাহর দূর্বলতাগুলোকে প্রকাশ করে দেবো, আর তোমাদের ছেলে-বুড়োকে একসাথে হত্যা করবো। এই মুহুর্তে তোমরা ছাড়া লড়াই করার মত আর কোন শত্রু আমাদের নেই।"
সুলতান চিঠির জবাব লিখিত ভাবে দিলেন না। যে দুই দূত চিঠি নিয়ে এসেছিল, প্রথমে তাদের কোমর থেকে শরীর করাত দিয়ে কেটে দু টুকরো করে ফেলা হল,তারপর মাথা আলাদা করে কায়রোর আল জুওয়েলিয়া গেটে বর্শায় গেথে ঝুলিয়ে দেয়া হল।
এই খবর শুনে ক্ষোভে বারুদের মত ফুঁসে উঠলেন হালাকু খান।নিজের তিন লাখ যোদ্ধা নিয়ে তৎক্ষণাৎ তিনি লড়াইয়ে প্রস্তুতি শুরু করলেন।
কিন্তু ভাগ্য এখানে হস্তক্ষেপ করলো।
১২৬০ সালের বসন্তে হালাকু খানের কাছে খবর এলো, খাকান মোঙ্কি খান দক্ষিণ চীনে অভিযান চলাকালীন অবস্থায় মারা গেছেন, কারাকোরামে জরুরীভাবে কুরুলতাই ডাকা হয়েছে। চেঙ্গিজ খানের সব বংশধরকে অনতিবিলম্বে কারাকোরামে হাজির হতে বলা হয়েছে, সেখানে তাদের মধ্য থেকে নতুন খাকান নির্বাচন করা হবে।
খাকান হতে কে না চায়?? আর সব মোঙল প্রিন্সের মত হালাকু খানকেও ছুটতে হল কুরুলতাইয়ে। কিন্তু যাবার আগে তিনি দূত হত্যার প্রতিশোধ নেবার জন্য দুই টুমেন যোদ্ধা রেখে গেলেন কিতবুকা নোইয়নের নেতৃত্বে। তার কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন ছিল, মামলুকদের পরাজিত করতে এই দুই টুমেন(১৫-২০,০০০) যোদ্ধাই যথেষ্ট। কিতবুকাকে অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে হালাকু রওনা হলেন মঙ্গোলিয়ার দিকে।
আরো অনেক উত্তরে,পোল্যান্ড থেকে কারাকোরামের দিকে রওনা দিচ্ছিলেন আরেক মোঙল প্রিন্স, বারকী খান।
তিনি কেবলই পোল্যান্ডে একদফা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ফিরছিলেন।
এতদিন মোঙলদের সাথে ক্রুসেডারদের সম্পর্ক ভালই ছিল, কিন্তু এই আক্রমণের ফলে পোপ ধারনা করলেন, মোঙলদের ধর্ম নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই। মুসলিমদের শেষ করে পরবর্তী আঘাত তারা খ্রিস্টান বিশ্বের ওপরেই হানবে। প্রায় একই কথা পোপকে লিখে পাঠালেন মোঙল খানের দরবার ঘুরে আসা পোপের প্রতিনিধি উইলিয়াম অফ রুবরাক।
পোপ আলেকজান্ডার পাপাল বুল জারি করলেন, মোঙলদের সাথে যারা সম্পর্ক রাখবে তাদের ক্যাথলিক গীর্জা একঘরে করে দেবে, তারা খ্রিস্টান বিশ্ব থেকে বহিষ্কৃত বলে ধরে নেয়া হবে। এই খবরে ভড়কে গেল সিরিয়া-ফিলিস্তিনের ক্রুসেডার রাজ্যগুলোর নেতারা, কারন তারা এতদিন মোঙলদের নিয়ে মুসলিমদের শেষ করার স্বপ্ন দেখছিল। সবচাইতে বিপদে পড়লেন এন্টিয়কের রাজা বোহেমণ্ড।আলেপ্পো দখলের সময় তাকে মোঙলদের সাথে রাস্তায় রাস্তায় ক্রুশ হাতে ঘুরতে দেখা গেছিল।
সামরিক কৌশলগত দিক থেকে,ক্রুসেডারদের অবস্থান ছিল ভূমধ্যসাগর উপকূল ঘেষে, মোঙল ইলখানাত আর মামলুক সালতানাতের মাঝামাঝি জায়গায়। তাদের সমর্থন উভয়পক্ষের জন্যই খুবই জরুরী ছিল। পাপাল বুল জারির ফলে বাধ্য হয়ে তারা মোঙল-মুসলিমদের এই লড়াইয়ে নীরব ভুমিকা পালন করলো।
কিতবুকা নোইয়ন এগিয়ে আসছে,খবরটা কায়রোতে চাউর হয়ে গেছে।
কয়েকদিনের ভেতর ফাকা হয়ে গেছে শহরের বেশিরভাগ।
মাগরেবীরা পালিয়েছে মরক্কোর দিকে, আরবরা বেশিরভাগ পালিয়েছে ইয়েমেনের দিকে।
শহরের গ্যারিসনে থাকা মামলুক সৈন্যরা ছাড়া তেমন কেউ কায়রোতে নেই।
আলেম ওলামারাও নিস্তব্ধ, কায়রোর পতন যে নিশ্চিত, তাতে কারো সন্দেহ নেই। অতি আশাবাদীরাও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
এর আগে মোঙলদের দূত হত্যার সাহস দেখিয়েছিলেন খাওয়ারিজম শাহ আলাউদ্দিন মুহাম্মাদ, তার পরিনতি হয়েছিল ভয়ংকর।
একই কাজ করেছেন মামলুক সুলতান সাইফ উদ্দীন কুতুজ।
কিতবুকা নোইয়ন সিরিয়া থেকে রওনা হবার খবর শুনে দ্রুত জরুরী পরামর্শ সভা ডেকেছেন সুলতান।
পরামর্শ সভায় আরো অনেকের সাথে যোগ দিয়েছিলেন বাইবার্স আর কালাউন। আমীরদের বেশিরভাগ পালানোর বাহানা দিতে ব্যস্ত থাকলেও বাইবার্স, কালাউনের মত অভিজ্ঞ কমান্ডারদের সমর্থন পেয়ে সুলতানের মনোবল বেড়ে গেল।
কিন্তু তাতেও পরামর্শ সভাকে যুদ্ধের পক্ষে রাজি করানো গেল না।শেষে সুলতান বলে বসলেন, "আমীরেরা, আপনারা দেশের খেয়ে, দেশের সম্পদে ধনী হয়ে এখন যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করছেন, ঠিক আছে। আমি একাই যুদ্ধে যাচ্ছি, যার ভাল লাগে সে আমার সাথে এসো, যার ভাল লাগে না, সে ঘরে ফিরে যাও, কিন্তু যে আমার সাথে যুদ্ধে যাবে না, তাকে আমাদের মেয়েদের ইজ্জত নষ্ট হবার পাপ হাশরে বহন করতে হবে।
এই কথার পর মাথা নিচু করে সুলতানের আদেশ মেনে নিতে বাধ্য হলেন আমীরেরা। যুদ্ধের নীল নকশা কাটা শুরু হল।
মূল পরিকল্পনার দায়িত্ব নিলেন বাইবার্স, অথচ তিনি ছিলেন কুতুজের পরম শত্রু। কিন্তু ইসলামের এই চরম বিপদের মুহুর্তে তারা সবাই বুঝতে পারছিলেন, বড় শত্রুর সামনে ছোট শত্রুতা ভুলে না গেলে ধ্বংস অনিবার্য।
কুতুজ বললেন, এতদিন মোঙলরা সবাইকে আগে আক্রমণ করেছে, তাই যুদ্ধের স্থান-কাল সবসময় তারা তাদের সুবিধামত বেছে নিতে পেরেছে, এবার আমরা আগে আক্রমণ করবো, আমাদের বেধে দেয়া জায়গায় লড়াই করতে বাধ্য হবে, একমাত্র তখনই ওদের সাথে আমাদের জেতা সম্ভব।
বাইবার্স সিরিয়া-ফিলিস্তিনে ছিলেন অনেক বছর, তিনি পরিকল্পনা করলেন, মোঙলদের বিরুদ্ধে মোঙলদের কৌশলেই লড়াই করা হবে। তাদের টেনে আনা হবে সিরিয়ার মরুভুমির ভেতর দিয়ে ফিলিস্তিনে, সেখানে তাদের ধোকা দিয়ে নিয়ে আসা হবে পাহাড়ী অঞ্চলে, যেখানে মোঙলরা এনভেলপিং ট্যাকটিক্স ব্যবহার করতে পারবে না।
এই সময়েই মিশরের বিজ্ঞানীরা নিয়ে এলেন নতুন এক অস্ত্র।মিদফা।
মধ্যযুগীয় হ্যান্ড ক্যাননের আদিপুরুষ।
এটা দিয়ে ভলি ফায়ার করে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়, বিকট শব্দও সৃষ্টি করা যায়। মিদফা ব্যবহারের দায়িত্ব দেয়া হল একটা ইউনিটকে।
ঠিক করা হল, সিনাই উপদ্বীপ দিয়ে ফিলিস্তিনে ঢুকে কিতবুকার বাহিনীকে ফিলিস্তিনের পাহাড়ী অঞ্চল নাজারেথে নিয়ে আসা হবে।
তাদের চ্যালেঞ্জ করা হবে সেপ্টেম্বরের তীব্র গরমে, যখন মোঙল ঘোড়ারা আরবের উত্তাপে হাঁপাতে শুরু করবে।
অগাস্টের মাঝামাঝিতে বাহিনী নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সুলতান সাইফ উদ্দীন কুতুজ। এই যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে বদরের যুদ্ধের মতই গুরুত্বপূর্ণ। হয় তারা জিতবেন, নয় ইসলাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে পৃথিবীর বুক থেকে।
কিতবুকার বাহিনীকে দূর থেকে আতশ কাচ ফেলে দেখতে পেয়েছে গোয়েন্দারা। আর মোঙলরা তাদের দেখতে পেয়েছে খালি চোখেই।মোঙলরা খালি চোখে প্রায় দশ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখতে পায়।
মোঙলদের দেখা গেছে শুনে বাইবার্স তার বাহিনীর দিকে ফিরে হুংকার দিয়ে উঠলেন, আগাও!!!
মোঙলদের মুখোমুখি হওয়ামাত্রই প্রবল এক ক্যাভালরি চার্জ করে বসলো বাইবার্সের বাহিনী। মোঙলদের ছোড়া তীরে কিছু মামলুক সওয়ার শহীদ হয়ে গেলেন। দ্রুত কাউন্টার এটাকে গেল মোঙল বাহিনী। বাইবার্স ঘোড়া ঘুরিয়ে পিছু হটে গেলেন।
আরব ঘোড়ার সাথে দৌড়ে পারা মোঙল ঘোড়ার কম্ম নয়। কিতবুকা বাইবার্সকে ধরতে পারলেন না।
একটু পর বাইবার্স আবার এক ক্যাভালরী চার্জ শানালেন। আবার পিছু ধাওয়া করলেন কিতবুকা, আবারো ফসকে গেলেন বাইবার্স।
এভাবে বেশ কয়েক দফা আক্রমণ-পালটা আক্রমণের পর বিরক্ত হয়ে কিতবুকা সিদ্ধান্ত নিলেন বাইবার্সকে তাড়া করে ধরবেন, তারপর শেষ করে ক্ষান্ত হবেন, ধারে কাছে কোথাও আর কোন মুসলিম ফৌজ দেখা যাচ্ছিল না, তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে কিতবুকার খুব বেশি দ্বিধায় ভুগতে হয় নি।
বাইবার্স মোঙলদের টেনে নিয়ে গেলেন আইন জালুতের পাহাড়ি এলাকায়, বেশ উচুতে পৌছানোর পর হঠাৎ ঘোড়ার লাগাম ঘুরিয়ে কিতবুকার মুখোমুখি হলেন তিনি।
কিতবুকা বিকট গর্জন করে মামলুকদের দিকে এগোতে লাগলেন।
কিন্তু তার হিসাবে একটা ভুল হয়ে গেছিল।
পেছন থেকে তাকে ঘিরে ফেলেছিলেন সুলতান কুতুজ, বাইবার্সের বাহিনী আসলে মামলুকদের মূল বাহিনীর একটা অংশ মাত্র, মূল বাহিনী আছে সুলতান কুতুজের সাথে।
কিতবুকা বুঝে গেলেন,তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। তার সঙ্গী জেনারেলরা জিজ্ঞেস করলেন কি করা যায়??
কিতবুকা বললেন, আর পিছু হটার উপায় নেই। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে মরতে চাই। খান দীর্ঘজীবী হোন।
বীর বিক্রমে মোঙলরা ঝাপিয়ে পড়লো মামলুকদের ওপর। কিন্তু তিন দিক থেকে ঘেরাও হয়ে যাওয়ায় তারা ট্যাকটিক্যাল দিক থেকে কোন সুবিধাই পাচ্ছিল না। কোন ক্লাসিক্যাল মোঙল ট্যাকটিক্সই এই ধরনের ন্যারো টেরেইনে কাজ করে না। ফলে যুদ্ধ পরিণত হল রক্তাক্ত,হাতাহাতি লড়াইয়ে।
কিতবুকার প্রচন্ড হামলায় মামলুকদের লেফট উইং ভেঙে গেল।প্রচুর মামলুক ফারিস শহীদ হয়ে গেল, এক পর্যায়ে মনে হতে লাগলো লেফট উইং গুড়িয়ে দিয়ে কিতবুকা বেরিয়ে যাবে।
পাহাড়ের একটু ওপরে নিজের ব্যক্তিগত ইউনিট নিয়ে যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করছিলেন সুলতান, যুদ্ধের এই বিশৃঙ্খল অবস্থায় "ওয়া ইসলামাহ!!ওয়া ইসলামাহ!! "(আমার ইসলাম,আমার ইসলাম)" বলে হুংকার দিয়ে নিজের শিরস্ত্রাণ ছুড়ে ফেলে লেফট উইংয়ে ছুটে গেলেন তিনি।
লড়াইয়ের ভয়ঙ্করতম জায়গায় কোন দেহরক্ষী ছাড়াই মহাবিক্রমে লড়ছিলেন কুতুজ, সুলতানের বীরত্বে উজ্জীবিত হয়ে নতুন করে লড়াই শুরু করলো পুরো বাহিনী।
সুলতান মরু সাইমুমের মত তলোয়ার চালাচ্ছিলেন আর চিৎকার করছিলেন, "ইয়া আল্লাহ!!তোমার গোলাম এই কুতুজকে আজকে বিজয়ী করো!!"
কিতবুকা মরিয়া হয়ে শেষবারের মত ঘুরে দাড়াতে চেষ্টা করলেন।
দূর্দান্ত এক ক্যাভালরি চার্জ করে তার বাহিনী মামলুকদের ফরমেশনের কয়েকটি জায়গা ভেঙে ফেললো,তারপর আরো একটি চার্জ করে ফরমেশন পুরোপুরি ভেঙে দিতে এগিয়ে এল।
এই সময়েই মিদফা ইউনিট দফায় দফায় হ্যান্ডক্যাননের বিস্ফোরন ঘটালো,আগুনের হলকা আর তীব্র আওয়াজে ভড়কে গিয়ে উলটে পড়ে গেল মোঙলদের ঘোড়া।
এবার অল আউট এসল্টের নির্দেশ দিলেন সুলতান কুতুজ।
এই হামলা সহ্য করার ক্ষমতা মোঙলদের ছিল না।
১২৬০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখ বিকেল নাগাদ আইন জালুতের ময়দান ভরে গেল মোঙলদের লাশে। লাশে ভরা ময়দানের মাঝামাঝি দেখা যাচ্ছিল,সাইফ উদ্দীন কুতুজ সিজদায় পড়ে আছেন।
আইন জালুত পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেয়া একটা লড়াই।
আপাত দৃষ্টিতে মাঝারি আকারের একটা যুদ্ধ হলেও এর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ছিল বিশাল।এই যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিমরা প্রথম বুঝতে পারে,মোঙলরা অপরাজেয় নয়।
মারাত্মকভাবে ভেঙে যায় মোঙলদের আত্মবিশ্বাস,ঠিক উল্টোটা ঘটে মুসলিমদের ক্ষেত্রে।
সুলতান কুতুজের নির্দেশে যুদ্ধের পর পালিয়ে যাওয়া মোঙলদের ইরাক সীমান্ত পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যান বাইবার্স,সিরিয়া থেকে ইরাক পর্যন্ত যত মোঙল গ্যারিসন আছে,সব খালি করে পালাতে থাকে হালাকু খানের সেনারা।
আইন জালুতের যুদ্ধের মাধ্যমে আরেকটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়,মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দেবার মত কোন আরব রাজনৈতিক-সামরিক শক্তি আর অবশিষ্ট নেই।নেতৃত্ব চলে গেছে তুর্কী মামলুকদের হাতে।

সাইফ উদ্দিন কুতুজ আইন জালুত
০ টি মন্তব্য      ৮৮৭ বার পঠিত         

লেখাটি শেয়ার করতে চাইলে: